কার্টুন-পত্রিকা টেক্কা

বাংলায় কার্টুন নিয়ে পত্রিকা খুব বেশি না হলেও কম নয়। কার্টুন নিয়ে পত্রিকা বলতে ঠিক কী বোঝায়, তা নিয়ে তক্কো হবে। এক দল পত্রিকার পরিচয় রঙ্গব্যঙ্গের পত্রিকা, তাতে রঙ্গব্যঙ্গের লেখা থাকে, লেখার সাথে ব্যঙ্গচিত্র থাকে অলংকরণ হয়ে, আবার কার্টুনও থাকে। শুধুই কার্টুনের পত্রিকা, কার্টুন নিয়েই পত্রিকা, তার সংখ্যা হাতে গোনা। এ সব নিয়ে আমরা কথা লিখব, ছবি দেখাব।

এ বারের কথা ‘টেক্কা’ নিয়ে। এই পত্রিকাটির কথা নানা জায়গায় পাই। খুঁজে পাই না। এই সবে হয়ে-যাওয়া ‘কার্টুন দল’-এর ‘বাংলা কার্টুন’ প্রদর্শনী নিয়ে খাটাখাটনির সময়ে প্রখ্যাত কার্টুনচিত্রী অমল চক্রবর্তী, ‘টেক্কা’র দুটি সংখ্যা দেন প্রদর্শনীতে রাখতে।

 

Tekka 1

এ বারের কার্টুনপত্তর-এ ‘টেক্কা’র ১ বর্ষ ১ সংখ্যাটি। প্রকাশকাল শুক্রবার ১৬ অগস্ট ১৯৬৩, ৩০ শ্রাবণ ১৩৭০। দাম প্রতি সংখ্যা ৩০ নয়া পয়সা।মলাটে দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলা ভাষায় এ ধরনের পত্রিকা এর আগে আর প্রকাশিত হয়নি।’ ইতিহাস অবশ্য অন্য কথা বলবে, এমন পাঠ মেনে নেবে না।

 

Tekka 2

পত্রিকাটিতে কার্টুন আছে, কার্টুন নিয়ে লেখা নেই। কার্টুন এঁকেছেন নাম-করা ব্যঙ্গচিত্রীরা। কাফী খাঁ, প্রমথ সমাদ্দার, শৈল চক্রবর্তী, রেবতীভূষণ, কে. সরকার, অমল চক্রবর্তী, ওমিও, কান্তিতুষার। প্রচ্ছদের কার্টুনটি কে. সরকার, কমল সরকারের আঁকা। ‘প্রসঙ্গত’ শিরোনামে একটি ছোট কার্টুন, যার প্রচলিত নাম ‘পকেট কার্টুন’, রয়েছে। এঁকেছেন কান্তি, এই পত্রিকার সম্পাদক তুষারকান্তি দাস-এর ছদ্মনাম। এই নামেই তিনি কার্টুন আঁকেন।

‘মান্যমুখ’ শিরোনামে ব্যঙ্গ প্রতিকৃতি, ক্যারিকেচার। পশ্চিম বাংলার একদা মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে এঁকেছেন রেবতীভূষণ। এই দুটি ছাড়া আর-একটি কার্টুন নেওয়া হয়েছে ‘টেক্কা’র এই সংখ্যাটি থেকে। শ্রী শৈল চক্রবর্তীর আঁকা।

 

Tekka 4

পত্রিকাটিতে ঘোষণা রয়েছে ‘কার্টুনিস্টদের প্রতি’। ‘ভালো কার্টুন সাদরে গৃহীত হবে। শুধু কালো রং দিয়ে আঁকা কার্টুনই পাঠাবেন। একাধিক রং চলবে না’। শেষের পাতায় শেষে লেখা ‘সম্পাদক কর্তৃক মুদ্রণভারতী প্রাঃ লিমিটেড, ২ রামনাথ বিশ্বাস লেন, কলিকাতা ৯ থেকে মুদ্রিত ও ২৪/১এ দু্র্গাচরণ মুখার্জী স্ট্রীট, কলিকাতা ৩ থেকে প্রকাশিত। শেষ মলাটে বলা ‘টেক্কা একটি কার্টুন পত্রিকা।’

 

Tekka 3

(মান্যমুখ-এর লেখা : শ্রুতিকীর্তি ডাঃ বিধানচন্দ্রের উত্তরসাধক হিসেবে যোগ্য হাতেই ইনি সমস্যাসংকুল ঘোলাটে আবহাওয়ায় ডব্লিউ বি সরকারের মানোয়ারী জাহাজের হাল ধরেছেন– অনেক জটিলতার জট ছাড়িয়েছেন নিপুণ হাতে। কিন্তু ইতিহাসের বিচিত্র পরিহাসে ‘খাদ্য’ নামক বস্তুটিই হচ্ছে আমাদের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী– প্রাক্তন অ-খাদ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক পাকাশয়ে নিতান্ত দুষ্পাচ্য সামগ্রী।

অতীতের কাসুন্দী ঘাঁটা নিষ্প্রয়োজন। হাল আমলের ট্রাজেডিটাই মর্ম্মস্পর্শী– না মর্ম্মান্তিক ভাবে উদরস্পর্শী। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শুভ সূচনা করে আমদরবারের কল্পতরুর ছায়ায় তাঁর জনপ্রিয়তার আসনটি বেশ গুছিয়ে বসেছেন এমন সময় উঠল খাদ্য-সমস্যার ঝড়। বেশবাস গুছিয়ে নিয়ে তাঁকে দপ্তরের আমলাতন্ত্রী দুর্গে আশ্রয় নিতে হল– যার বাইরে বিরোধী দলের ক্ষীয়মাণ কণ্ঠ জোরদার হল গণ-আন্দোলনের সোচ্চার আওয়াজে– ধূলিলুণ্ঠিত লাঞ্ছিত মর্য্যাদা পেল খাড়া হয়ে দাঁড়াবার নড়ি।

মশারিখানা শিকেয় তুলে রেখে কেরোসিন-সিক্ত কলেবরে যিনি রাতের কৃচ্ছ্রসাধনার নামে কৃচ্ছ্রতাবিলাস করেছেন সেই আরামবাগের গান্ধীর এ কথা বোঝার সময় হয়েছে যে গম খাওয়ার ফতোয়া জারী করাটা অন্নপ্রাণ বাঙালীর দেহধর্ম্মে তথা মনোমর্ম্মে নির্ম্মম আঘাত। এর বিকল্প পন্থা তাঁকে খুঁজতেই হবে, না গতিরন্যথা। –রেবতীভূষণ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *